আজ আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটি ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করবো,
ঘড়িতে প্রায় তখন সন্ধ্যা ৭-টা। অফিসের কাজও শেষ ভাবলাম কাজ যেহেতু শেষ তাহলে বাসায় চলে যাই। তাই অফিস থেকে বের হয়ে গেলাম কিন্তু বাইরে গিয়ে দেখি তুমুল ঝড় বৃষ্টি তো কি করার, আবার অফিসেই ফিরে এসে বসে রইলাম কিছুহ্মন। বাইরে আরেকবার বের হয়ে দেখলাম বৃষ্টি অনেকটা থেমেছে তাই বেরিয়ে পড়লাম বাসার উদ্দেশ্যে। গুলশান ১ এর গোল চত্তর থেকে BRTC বাসে উঠে পড়লাম আমি যাবো ফ্রার্মগেট। বাসে উঠে দেখলাম বাসে কোনো সিট খালি নেই। আমি সব সময় বাসের সামনের দিকেই বসি বা দাড়াই। সিট না থাকায় দাড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।
তখনই একজন ছেলে, পড়নে স্যুট কোট এবং মুখে মাস্ক। বয়স ২৫ -২৭ হবে এমন। ছেলেটি আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ডেকে বললো, আপু এইখানে বসতে পারেন আমার পাশে যিনি আছে উনি সামনেই নেমে যাবে। তো আমার শরীরটাও খারাপ ছিলো। ভাবলাম বসে পড়া-টাই শ্রেয়। বাসের সিট-টা ছিলো ঠিক মাঝখানের দিকে। আমি বসার পরেই পাশে থাকা ছেলেটা আমাকে কথা জিজ্ঞেস করতে থাকলো আমি উত্তর দিচ্ছিলাম না কারণ অপরিচিত কারো সাথে কথা বলা-টা আমার একটুও পছন্দ না। তো ছেলেটা যখন বুঝলো আমি কথা বলতে ইচ্ছুক নই, সে নিজের শার্টের হাতা-টা বার বার ঠিক করতে শুরু করলো। আমি ছিলাম বাম দিকে আর ছেলেটিও বাম দিকের শার্টের হাতা টাই ঠিক করছিলো। এরপরেই সে আবার আমার সাথে কথা বলা শুরু করলো। সে আবার আমার বিষয়ে সব ধরনের প্রশ্ন করতে থাকে। আর এবার আমিও আমার সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য বলতে থাকি। যেমন : আমি কোথায় থাকি, কি করি, কোথায় জব করছি, পরিবারে কারা কারা আছেন ইত্যাদি। এক পর্যায় আমি আমার মানি ব্যাগ-টা বের করি বাসের কন্টাক্টার-কে ভাড়া দেওয়ার জন্য, তখন ছেলেটা বললো আমার ভাড়া টাও দিবেন ? আমিও তার ভাড়া-টা দেওয়ার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করি।
আমি বুঝতে পারছিলাম না,
আমি কি করছি ?
কেন করছি ?
আমি হঠাৎ করেই আমার ব্যাগ থেকে টাকা, মোবাইল সব-ই বের করতে শুরু করলাম তখনই আমার সামনের সিট এ-বসা একজন আপু পিছনে তাকিয়ে আমাকে ইশারায় কিছু বলার চেষ্টা করতে থাকে। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আপু-টি আমাকে বার বার কিছু বলার চেষ্টা করছিলো। এক সময় সে বুঝতে পারে আমি আমার সেন্স-এই নেই তখন আপু-টি আমায় বলে উঠে,
কি কেমন আছো তুমি ?
আংকেল আন্টি ভালো আছে ?
বাসায় যাও না কেন ? যেতে পারো না মাঝে মাঝে ?
আমি তখন একটু বুঝতে পারলাম আসলেই আমি কি করছি।
ছেলেটা বুঝে গেছে তখন যে ওর এইসব কার্যক্রমে সামনে সিট-এ থাকা আপু ওকে সন্দেহ করছে।
তখন ছেলেটা একদম ঘুমের ভান করে বাসের জানালায় হেলান দিয়ে শুইয়ে রইলো। আবার তখনই আপু-টির পাশের সিটের লোক-টাও উঠে গিয়েছে তাই আমাকে উনি উনার পাশে গিয়ে বসতে বললেন। আমিও উঠে উনার পাশেই বসলাম। তখন আপু-টি আমাকে সব কিছু খুলে বলতে থাকে। আসলে ও-ই ছেলেটি ছিলো একটা গ্যাং এর সদস্য। কয়েকদিন যাবত ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার বাস গুলো-তে এদের গ্যাং এর সদস্যরা যাত্রীর বেশে বাসে উঠে নানান রকম ভাবে মেয়েদেরকে হয়রানি করছে। এইসব গ্যাং এর সদস্যদের সাথে থাকে বিভিন্ন ড্রাগস যা মানুষকে অচেতন বা হিপনোটাইজ করতে ওরা ব্যবহার করে আবার কিছু কিছু সদস্যের সাথে থাকে অস্ত্র। তখন আমিও বুঝতে পারি ছেলেটার হাতের মধ্যেই কোনো ড্রাগস ছিলো যে কারণেই আমার সেন্স কাজ করছিলো না।

আর এরা বিশেষ করে মেয়েদের-কেই টার্গেট করে আর সব তথ্য সহ বিভিন্ন জিনিস হাতিয়ে নেয়।
এইসব শুনে আমি এতোটাই ভয় পাই যা বলে বোঝানোর মতো নয়। মনে হচ্ছিলো আমার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। আমার এই অবস্থা দেখে আপু-টি বার বার আমায় সাহস দিচ্ছিলো। যেনো আমি নিজেকে স্থির করে নেই। শুধু ভাবছিলাম আজকে এই আপু না থাকলে আমার কি হতো ?
এইভাবেই আমি এসে পৌঁছাই আমার গন্তব্যে তারপর আপুর হাতটি ধরে শুধু বলি আজকে আমাকে বাচাঁলেন আপু। আপনার এই উপকার কখনো ভুলবো না। তারপর নেমে পড়ি বাস থেকে। এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা আমার মনে নিরাপত্তার তীব্র অভাব সৃষ্টি করে।
আজ আপু-টি সঠিক সময়ে আমাকে উপকার করার কারনে আমি হয়ত বেঁচে গিয়েছি কিন্তু সবসময় আমাকে বাচাঁনোর জন্য কেউ না-ও থাকতে পারে এবং আপনার পাশে-ও কেউ না থাকতে পারে এমন পরিস্থিতিতে সাহায্য করার জন্য।
তাই সবার আগে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। মহিলা কিংবা পুরুষ প্রত্যেকটি মানুষের উচিত বাসে,রাস্তাঘাটে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা এবং নিজের আত্মরহ্মার জন্য সাথে সেল্ফ ডিফেন্স শক, স্টিক রাখা কারণ নিজের নিরাপত্তা-কে প্রাধান্য দেওয়াই এখন এই সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সাবধান থাকুন এবং অন্যদেরও সাবধান করুন।
আপনাদের সাবধানতার প্রয়োজনে, আমরা নিয়ে এসেছি সেল্ফ ডিফেন্স এর বিভিন্ন প্রোডাক্ট। যা আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। তাই সেল্ফ ডিফেন্স প্রোডাক্ট নিতে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।
ধন্যবাদ।